আধুনিক যুগ-BCS Preliminary তে আধুনিক যুগ এবং অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়ও এ অধ্যায় থেকে প্রশ্ন আসে
বাংলা সাহিত্যে আঠার শ সাল থেকে আধুনিক যুগের সূত্রপাত। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের স্বতন্ত্র গৌরব নিয়ে এ যুগের সূত্রপাত। ইংরেজ আগমণের ফলপ্রসূ প্রভাবের সঙ্গে এ যুগের সম্পর্ক জড়িত। ইংরেজি শিক্ষা ও সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এদেশের বুদ্ধিজীবীরা চিন্তায় , কাজে ও সৃষ্টিতে এক নতুনত্ব অনুভব করেন, তার নাম দেয়া হয় নবজাগৃতি বা রেঁনেসা। আর এই নব জাগৃতিই আধুনিক যুগকে সামাজিক -সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে মধ্যযুগ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে আধুনিক যুগ ধরা হলেও এই যুগের বিশেষ লক্ষণ পূর্ব থেকে কিছুটা পরিস্ফুট হতে দেখা যায়। ১৭৬০ সালে পরলোকগত মধ্যযুগের শেষ কবি ‘ রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র’ -এর ‘অন্নদামঙ্গল ‘ কাব্য মানবিকতার সুরটি ঝংকৃত হয়ে উঠেছিল।আঠার শতকের দ্বিতীয়ার্ধে রচিত কবিগান, যাত্রা , পাঁচালী প্রভৃতি ক্ষেত্রে মধ্যযুগীয় আলৌকিকতা পরিহার করে অনেকাংশে বাস্তবধর্মী হয়ে দেখা দিয়েছিল। সাহিত্যেকে জীবন্মূখী করার এই ইঙ্গিতময় মুহূর্তে ইউরোপীয় ভাবধারার প্রত্যক্ষ প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূত্রপাত ও গৌরবময় যত্রা। মানবিকতা, ব্যক্তিচেতনা, সমাজচেতনা, জাতীয়তাবোধ, রোমান্টিকতা, মৌলিকতা,মুক্তবুদ্ধি, নাগরিকতা প্রভৃতি আধুনিকতার বিশেষ কিছু লক্ষণ। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের পূর্বে গদ্যরীতির প্রচলন ছিলনা। গদ্যের লিখিত রূপ চিঠিপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, বৈষ্ণবকড়চা ও বিদেশি খ্রিস্টান কতৃক লিখিত ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থের সঙ্কীর্ণ সীমায় আবদ্ধ ছিল। ১৫৫৫ সালে আসাম রাজাকে লেখা কোচবিহারের রাজারএকটি পত্রকে বাংলা গদ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন বলে মনে করা হয়। বাংলা গদ্যের বিকাশ -এ ‘ শ্রীরামপুর মিশন’ ও ‘ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ব্যক্তিপর্যায়ে ‘উইলিয়াম কেরী’ , ‘মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার’ , ‘রামরাম বসু’, ‘গোলকনাথ শর্মা’, ‘তারিণীচরণ মিত্র’, ‘ চন্ডীচরণ মুন্সী’, ‘রাজীবলোচন মূখোপাধ্যায়’ প্রথম পর্যায়ে বাংলা গদ্যের চর্চা করে বাংলা গদ্যাএকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এরপর ‘রামমোহন রায়’, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’, ‘দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুর’, ‘অক্ষয়কুমার দত্ত’, ‘প্যারীচাঁদ মিত্র’, ‘কালীপ্রসন্ন সিংহ’ -এর হাত ধরে ‘ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’ -এর হাতে এসে বাংলা গদ্য পরিণত রূপ পায়।
Comments
Post a Comment